ব্যবহার
সোনা পাতায় বিদ্যমান বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানগুলির কারণে এটা প্রধানত জোলাপ বা রেচক হিসেবে বেশী ব্যবহৃত হয়। কোষ্ট-কাঠিন্য দূর করতে চমৎকার কাজ করে। সোনা পাতায় বিদ্যমান এনথ্রানয়েড রেচক হিসেবে উদ্দীপনা যোগায় এর কারণ হল সেনোসাইড এবং রেইন এনথ্রোন হজম প্রক্রিয়াকে প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে। রেচক (Laxative effect) বা শীতলকারক হওয়ার ফলে বৃহদন্তে পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট শোষণ বাধাপ্রাপ্ত হয় যা ইনটেস্টাইন্যাল উপাদান গুলোর ভলিউম এবং চাপ বৃদ্ধি করে। এতে কোলনের সঞ্চালন উদ্দীপিত হয়। ফলে খুব অল্প সময়ে এবং খুব সহজেই মল দেহ থেকে বাইরে নিষ্কাষিত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) মাঝে মধ্যে সংঘটিত কোষ্ট-কাঠিন্য দূর করার জন্য স্বল্প সময়ের চিকিৎসা হিসেবে সোনাপাতা ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এছাড়া পায়ু পথের সমস্যা দূর করতে, অর্শের সমস্যায়, অপারেশনের পূর্বে ও পরে পেট পরিষ্কার রাখতে সোনাপাতা ব্যবহার করা হয়।
সোনাপাতায় বিদ্যমান ইমোডিন বিভিন্ন পরিমাণে চিকিৎসায় ব্যবহা করা হয়। প্রদাহ নাশ করতে ১৫ মি.গ্রা./ কেজি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া এন্টি সেপটিক ও এন্টি আলসার হিসেবেও এটা কাজ করে। এন্হ্রাকুইনোন সাইটোটক্সিক এবং কোষ পুনরুদ্ধার-এ রিজেনারেশনে উদ্দীপনা জাগায়, ডিটক্সিফিকেশন এবং পরিষ্কারক হিসেবেও কাজ করে।
সোনাপাতার নানাবিধ ব্যবহারের মথ্যে রয়েছে-ক্ষুধা কমায়, যকৃত বিকৃতি, প্লীহা বিকৃতি, বদহজম, ম্যালেরিয়া তকের বিভিন্ন সমর্সা জন্ডিস এবং এনিমিয়। কোষ্ঠকাঠিন্য , রেচক , ওজন কমাতে সাহায্য করে ।
এছাড়া জাদু আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাতে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সোনাপাতা ব্যবহার হয়। অসংখ্য এক্সোরসিস্টের অভিজ্ঞতাতে দেখা গেছে, বিভিন্ন আয়াত বা দোয়া পড়ে এতে ফুঁ দিয়ে খেলে জাদু নষ্ট হয়ে যায়, অথবা পেট থেকে জাদুর বস্তু বের হয়ে যায়।
রাসুল সাঃ বলেন, এমন কোনো প্রতিষেধক যদি থাকতো, যা মৃত্যুকে প্রতিরোধ করতে পারতো, তাহলে তা হতো সোনা পাতা -তিরমিযী , হাদিস নং ২০৩১
খাওয়ার নিয়মঃ
- রাতে আধা চা চামচ সোনাপাতার পাউডার (অথবা একমুঠ সোনাপাতা) আধা গ্লাস গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে ছেকে নিয়ে অল্প পরিমাণ গরম পানি মিশিয়ে চায়ের মত পান করতে হবে। অথবা চিকিৎসকের পরামর্শে খেতে হবে ।
- জাদুটোনা আক্রান্ত ব্যক্তিরা সিহরের আয়াত এবং সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে ফুঁ দিয়ে এরপর নিয়ম অনুযায়ী খেতে পারেন। কিংবা আপনাকে গাইড করা রাক্বির পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।
- দ্রুত সোনাপাতা খাবার প্রয়োজন হলে আর দীর্ঘ সময় ভিজিয়ে রাখা সম্ভব না হলে, আধা চা চামচ পাউডার আধা গ্লাস গরম পানিতে ভিজিয়ে ৫মিনিট ঢেকে রাখুন। এরপর পাতা ছেকে নিয়ে চায়ের মত পান করুন। অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী…।
সতর্কতাঃ
- সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিনের বেশী সেবন করা উচিৎ না।
- এটা খাবার পর অন্তত ৪-৫ ঘণ্টা টয়লেটের আশেপাশে থাকতে হবে।
- আমাশয়, পাতলা পায়খানার রোগীদের, বৃদ্ধদের, দুর্বলদের, ও অন্ত্রের কোন রোগ থাকলে, যেমন-অন্ত্রের প্রদাহ, আলসার, এপেনহিসাইটিস ইত্যাদি এসব ক্ষেত্রে সোনাপাতা ব্যবহার করা যাবে না।
- এছাড়া গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে এবং ৫ বছরের নিচের বাচ্চদের এই হার্বস ব্যবহার করা উচিত নয়।
- দীর্ঘ সময় ধরে সোনা পাতা ব্যবহার করলে হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে, হাড় বা মাংশপেশী দূর্বল হয়ে পড়ে এবং ক্ষুধা কমে যাওয়ার করণে শরীরের ওজন কমে যেতে পারে।
- এছাড়া উচ্চ মাত্রায় ব্যবহারের ফলে পেটে ব্যথা এবং ডায়রিয়া হতে পারে।
বাংলা নাম: সোনা পাতা, সোনামুখী
ইংরেজী নাম: Senna, Tinnevelly Senna
বৈজ্ঞানিক নাম: Cassia angustifolia Vahl.
পরিবার: Caesalpiniaceae
আরবি নাম: সেনামাক্কী