রান্নায় ব্যবহার হলেও ভেষজ ওষুধ হিসেবেও ‘মেথি’ চমৎকার। মেথিতে রয়েছে—প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, আয়রন, কপার, ভিটামিন ‘সি’, নিয়াসিন ইত্যাদি। এগুলো ছাড়াও এতে রয়েছে ডায়োজেনিন এবং বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হরমোন।
মেথির নানা গুণ
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে : মেথিকে বলা হয় ডায়াবেটিসের মহৌষধ। রক্তে যাঁদের সুগার বা চিনির মাত্রা অনেক বেশি, তাঁরা মেথি খেলে উপকার পাবেন। স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতাও তুলনামূলকভাবে কমায়।
- যৌনশক্তি বাড়ায় : দিনে দুবার মেথির রস পরিমাণমতো সেবন করলে যৌনশক্তি হ্রাসজনিত সমস্যায় উপকার মেলে।
- চর্বি কমায়/রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে : রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে বা রক্তে চর্বির পরিমাণ কমাতে দারুণভাবে কার্যকর বলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- গলা ব্যথা কমায় : লেবু ও মধুর সঙ্গে মেথিদানার গুঁড়া মিশিয়ে খেলে গলা ব্যথা উপশম করে।
- চুল পড়া : স্বাস্থ্যহীন চুলের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে মেথি বেশ কার্যকরী। বেটে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে মাথায় লাগালে চুল পড়া কমে। নারিকেল তেলের সঙ্গে মেথি মিশিয়ে সেই তেল ব্যবহার করলে চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত হয়, চুল পড়া কমে, খুশকিও দূর করে।
- হরমোনাল সমস্যা : মেথিতে থাকা ‘সাপোনিস’ বা ‘ডাইওসজেনিন’ নামের যৌগ পদার্থ হরমোনের স্তর বা এর পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- হজমে সহায়ক : প্রতিদিন খালি পেটে সকালে মেথি খেলে হজমশক্তি বৃদ্ধি ঘটে। গ্যাস্ট্রিকের রোগীদের জন্য মেথি খুবই উপকারী।
- জ্বর : লেবুর রস ও মধুর সঙ্গে মেথি খেলে ঘাম দিয়ে জ্বর সেরে যায়, গলার খুসখুসে ভাব কমে যায়।
- ওজন কমায় : যাঁরা বেশি ওজন নিয়ে ভুগছেন, তাঁদের জন্য এটি বেশ উপকারী।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : মেথি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শরীরকে রাখে সতেজ। রক্তের উপাদানগুলোকে করে উদ্দীপ্ত। ফলে মানুষের কর্মোদ্দীপনাও বৃদ্ধি পায়।
- কৃমি প্রতিরোধ : সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে কৃমি দূর হয়।
- মাতৃদুগ্ধ বাড়ায় : মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধির জন্য কালিজিরার মতো মেথি পিষে খাওয়া বেশ উপকারী।
- ত্বকের সমস্যায় : গরমজনিত ত্বকের অসুখে অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে ত্বকে ঘা, ফোঁড়া, ইরিটেশন দূরীকরণ, বয়সের ছাপ পড়া থেকে রক্ষা ইত্যাদিতে মেথির জুড়ি নেই। প্রতিদিনের ফেসপ্যাকে মেথিগাছের নির্যাস ব্যবহার করলে মুখের ব্রণ, কালো দাগ ও ফুসকুড়ি নিরাময় হয়।
ব্যবহারপদ্ধতি
- প্রতিদিন সকালে বা বিকালে এক চামচ মেথি গুঁড়া পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। সম্ভব হলে খালি পেটে বা ভরা পেটে চিবিয়েও খাওয়া যায়।
- সারা রাত মেথি ভিজিয়ে সকালে পানি খেলেও উপকার মেলে।
- মেথির পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়, যা গ্রামবাংলার মানুষের প্রিয় খাদ্য।
সাবধানতা
- মেথি প্রয়োজনে রোদে শুকিয়ে নেওয়া যাবে, কিন্তু আগুনে ভেজে খাওয়া ঠিক হবে না, এতে খাদ্যগুণ নষ্ট হয়।
- ছয় সপ্তাহে অন্তত দিনে দুবার করে মেথি নিয়মিত খেলে উপকার মেলে। টানা ছয় মাস খেলে আরো ভালো।
- গর্ভাবস্থায় না খাওয়া ভালো।
লিখেছেন
পুষ্টিবিদ রাজিয়া হক
ডায়েট প্লানেট অ্যান্ড নিউট্রিশন কনসালট্যান্সি
@ kalerkantho