শিলাজিত : কী এটা? কী কী গুণ আছে শিলাজিতের?
আপনি চাইলে সুক্কার শপ থেকে শিলাজিত কিনতে পারবেন।
এই অংশটি আনন্দবাজারের অনলাইন সংস্করণ থেকে নেয়া:
১.
শিলাজিৎ। কালচে বাদামী রঙের একটি পদার্থ। উঁচু পাহাড়ের শিলা থেকে নির্গত এই নির্যাস মূলত পাওয়া যায় ভারত, নেপাল, ভুটান, রাশিয়া, ইরান, মঙ্গোলিয়া এবং পেরুর দক্ষিণের পাহাড়গুলিতে।
পেরুতে এই পদার্থ পরিচিত ‘আন্দিয়ান শিলাজিৎ’ নামে।
২.
শিলাজিৎকে কখনও কখনও খনিজের নির্যাস বা রজন হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। তবে তা সঠিক নয়। আলকাতরার মতো চটচটে হলেও এই পদার্থ জলে সহজেই গুলে যায়।
গবেষকেদের একাংশের অনুমান, বহু শতাব্দী ধরে ইউফোরবিয়া এবং ট্রাইফোলিয়াম উদ্ভিদের প্রজাতি থেকে নিঃসৃত ল্যাটেক্স এবং রজন নিঃসরণকারী উদ্ভিদের পচনে তৈরি হয় শিলাজিৎ।
শিলাজিতে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ হিউমিক অ্যাসিড এবং ফুলভিক অ্যাসিড থাকে। এ ছাড়াও থাকে সেলেনিয়াম-সহ একাধিক রাসায়নিক উপাদান।
৩.
তবে একটু খেয়াল করলেই দেখা যায় নামীদামি সমস্ত ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা বা আয়ুর্বেদ সংস্থায় শিলাজিৎকে নতুন মোড়কে প্যাকেটজাত পণ্য হিসেবে বিক্রি করে। বাজারে এর চাহিদাও ব্যাপক। দামও নেহাত কম না।
নামী সংস্থার ৪০ গ্রাম শিলাজিতের দাম হয় প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার টাকা।
৪.
কিন্তু কেন এত চাহিদা শিলাজিতের? কেনই বা এত দাম?
শিলাজিৎ প্রাকৃতিক যৌনক্ষমতা বর্ধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই যৌনক্ষমতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে অনেকেই শিলাজিৎ খান।
অনেক পুরুষেরই শরীরে যৌন হরমোন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা তুলনামূলক ভাবে কম থাকে। এর ফলে পুরুষদের মধ্যে— কম যৌন চাহিদা, চুল পড়া, পেশি ভর হ্রাস পাওয়া, ক্লান্তি, শরীরে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধির মতো লক্ষণগুলি দেখতে পাওয়া যায়।
শরীরে টেস্টোস্টেরনের এই ঘাটতি ঠিক করতে অব্যর্থ শিলা়জিৎ। মাত্র তিন মাসেই শিলাজিৎ পুরুষের যৌনক্ষমতা অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয় বলেও এক সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে।
পুরুষ বন্ধ্যাত্ব কমাতেও কাজ করে শিলাজিৎ।
একটি গবেষণায়, ৬০ জন পুরুষকে ৯০ দিন ধরে দিনে দু’বার করে শিলাজিৎ খাওয়ানো হয়। ৯০ দিন পরে গবেষণায় অংশ নেওয়া পুরুষদের ৬০ শতাংশের বীর্যে শুক্রাণুর পরিমাণ বাড়ে। ১২ শতাংশ পুরুষের মধ্যে শুক্রাণুর গতিশীলতাও বৃদ্ধি পায়।
৫.
তবে যৌন ক্ষমতা বাড়ানো ছাড়া আরও অনেক চিকিৎসা গুণ রয়েছে শিলাজিতের।
হৃৎপিণ্ড ভাল রাখার জন্যও অনেকে শিলাজিৎ খান। কিছু গবেষক ইঁদুরের হৃৎপিণ্ডের উপর শিলাজিতের কর্মক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তাতে আশানুরূপ ফল আসে বলেও ওই গবেষকরা দাবি করেছেন।
রক্তে লোহিত কণিকা এবং লোহার পরিমাণ বাড়াতেও সাহায্য করে শিলাজিৎ। অন্তত এমনটাই মত বিশেষজ্ঞেদের একাংশের।
কিছু কিছু গবেষক এ-ও দাবি করেছেন যে, কম ঘুম হওয়া ব্যক্তিদের ঘুমের সময় বাড়াতে এবং আলস্য কাটাতেও শিলা়জিতের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
শিলাজিৎ ফুলভিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ। ফুলভিক অ্যাসিড শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। তাই শিলাজিতের নিয়মিত ব্যবহারের ফলে বার্ধক্য দেরিতে আসে বলেও দাবি করেন অনেকে।
৬.
শিলাজিতের কি কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে?
শিলাজিৎ একটি প্রাকৃতিক উপাদান হলেও প্রাকৃতিক অবস্থায় শিলাজিৎ খাওয়া উচিত নয়। অপ্রক্রিয়াজাত শিলাজিতে অনেক ধাতুমৌল, ছত্রাক এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ মিশে থাকতে পারে। এর ফলে এই শিলাজিৎ খেলে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৭.
বাজারে শিলাজিৎ তরল এবং গুঁড়ো অবস্থায় পাওয়া যায়। দুধ বা জলে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে এটি। তবে নিজে থেকে একদমই শিলাজিৎ খেতে যাবেন না। শিলাজিৎ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসক সবুজ সঙ্কেত দিলেই তবেই এটি খাওয়ার কথা ভাবুন।
নিচের অংশটি মাই-উপচার ওয়েবসাইটের:
শিলাজিৎ একটি খনিজ পদার্থ যা হিমালয় ও হিন্দুকুশ পর্বতমালায় প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়। এটি একটি বিরল প্রজাতির রজন যা তৈরি হয় হাজার বছর ধরে পচন ধরা গাছ ও উদ্ভিদের উপকরণ থেকে। এই আটকে থাকা উদ্ভিদ উপকরণ বাদামী থেকে কালো রঙের চটচটে আঠার মত একটি পদার্থ হিসেবে বেরিয়ে আসে পাথরের ফাঁক থেকে। আয়ুর্বেদ, ভারতের ঐতিহ্যবাহী ওষুধ ব্যবস্থা হাজারো বছর ধরে শিলাজিৎ ব্যবহার করে চলেছে এটির স্বাস্থ্যবর্ধক বৈশিষ্টের জন্য। আয়ুর্বেদে এর সার্বিক স্বাস্থ্য উন্নীত করার উপকারিতা উল্লেখ করা হয়েছে।
শিলাজিৎ সম্পর্কিত কিছু তথ্যঃ
- লাতিন নামঃ Asphaltum punjabianum
- প্রচলিত নামঃ খনিজ পিচ, খনিজ মোম, শিলাজিৎ
- সংস্কৃত নামঃ শিলাজিৎ,শিলাজিতা
- ভৌগলিক বন্টনঃ শীলাজিৎ সাধারণত অত্যন্ত সহজলভ্য হিমালয়ে যার মধ্যে হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, অরুণাচল প্রদেশ এবং কাশ্মীরে এটি বৃহত্তম পরিমাণে মজুদ রয়েছে। চীন, নেপাল, পাকিস্তান, তিব্বত, এবং আফগানিস্তানেও এটি পাওয়া যায়।
শিলাজিতের স্বাস্থ্য উপকারিতা
শিলাজিতের বেশ কিছু নিরাময়কারী উপকারিতা আছে তবে এটি বিশেষতঃ পরিচিত একটি স্বাস্থ্যবর্ধক টনিক হিসেবে। ভাল স্বাস্থ্য উন্নীত করার ক্ষেত্রে শিলাজিতের কিছু ব্যবহার সম্পর্কে একটু খতিয়ে দেখা যাক।
- ওজন কমানোয় সহায়তাঃ ক্লিনিকাল গবেষণা ইঙ্গিত করে যে শিলাজিতে কিছু সক্রিয় মৌল রয়েছে যা BMI বাড়িয়ে ওজন ও কোমরের পরিধি কমাতে সাহায্য করে।
- কোষ্ঠকাঠিণ্য কমায়ঃ শিলাজিৎ শরীরে টনিকের মত কাজ করে যার ফলে এটি অন্ত্রের পেশীগুলিকে শক্ত করে হজমে সাহায্য করে এবং শরীর থেকে খাদ্য নিষ্কাশন করে কোষ্ঠকাঠিণ্য থেকে মুক্তি দেয়ে।
- শুক্রাণুর গুন্তি বাড়ায়ঃ 1.5 মাস ধরে নিয়মিত শিলাজিৎ সেবন করলে তা বীজকোষ উদ্দীপক হরমোন বাড়িয়ে তোলে যার ফলে এটি শুক্রাণুর গুন্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে যে বিশেষ ভাবে কার্যকর তা দেখা গেছে।
- পাহাড়ি অসুস্থতা থেকে মুক্তি দেয়ঃ উচ্চতার কারণে হওয়া অসুস্থতার সার্বিক সমাধান হল শিলাজিৎ। এটি যে শুধুমাত্র চাপ ও উদ্বেগ থেকেই মুক্তি দেয় তা নয়, উচ্চতার কারণে হওয়া ফুসফুসের সমস্যা হাইপক্সিয়াও কমিয়ে দেয়।
- রক্তাল্পতা থেকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়ঃ শিলাজিৎ হল লোহার একটি ভাল উৎস, যা হিমোগ্লোবিন ও লাল রক্তকোষের গুন্তি বাড়ায়। টনিক হওয়ার কারণে এটি রক্তাল্পতাগ্রস্ত লোকজনদের মধ্যে দুর্বলতা ও ক্লান্তি কমায়।
- অ্যালজাইমার’স অগ্রগতি থামায়ঃ গবেষণায় প্রমাণিত তথ্য ইঙ্গিত করে যে শিলাজিতে থাকা ফাল্ভিক অ্যাসিড মস্তিষ্কে টাউ প্রোটিনের অতিরিক্ত পুঞ্জিভূত হওয়া রোধ করে, অন্যভাবে বলতে গেলে যা স্নায়ুক্ষয় ও অ্যালজাইমার’স হওয়ার কারণ,তা আটকায়।
- পাকস্থলিতে ঘা হওয়া আটকায়ঃ শিলাজিৎ গ্যাস্ট্রিক নিঃসরণ কমিয়ে পাকস্থলির আস্তরণকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে আলসার হওয়া রোধ করে বলে শোনা যায়।
শিলাজিৎ সেবনের নিয়ম
সাধারণত, কোনও বিশেষ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া 300-500মিঃগ্রাঃ (অর্থাৎ ১গ্রামের এক তৃতীয়াংশ বা অর্ধেক) শিলাজিৎ রোজ খাওয়া যায়। আয়ুর্বেদিক ডাক্তারেরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন 1-3ফোঁটা তরল শিলাজিৎ দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়ার জন্য।
শিলাজিতের সঠিক ডোজ এবং খাওয়ার মেয়াদ বয়েস এবং শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে থাকে। তাই আপনার জন্য শিলাজিতের সঠিক ডোজ নির্ধারণ করার জন্য একজন আয়ুর্বেদিক ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উত্তম।
you may order shilajit from sukkar shop